ডিসেম্বরের শীতল দুপুর। দিন তিনেকের ছুটিতে আসুন বাইকে বিষ্ণুপুর।

 

রামপুরহাট থেকে সিউড়ি হয়ে দুর্গাপুর হয়ে বিষ্ণুপুর যাত্রা আমাদের 100 সিসি বাইক নিয়ে(100 cc bike at long trip) :-

রামপুরহাট থেকে সিউড়ি হয়ে দুর্গাপুর কে পাশে রেখে বিষ্ণুপুর যাত্রা প্রায় 165 কিলোমিটার এর যা  একদিনে করা সম্ভব। আমি আগেও বলেছিলাম 100 সিসি বাইকের ক্ষেত্রে একদিনে 200 কিলোমিটার পর্যন্ত যাত্রা করা যায় । কিন্তু প্রতি 40 কিলোমিটার অন্তর 15 থেকে 20 মিনিটের ব্রেক  দেওয়া একান্ত জরুরী। রামপুরহাট থেকে সিউড়ি রাস্তাটি ভালো হলেও সিউড়ি থেকে দুর্গাপুর যাবার মধ্যে 5 কিলোমিটার রাস্তা কিছুটা খারাপ পাবেন



গাড়ি চালানোর সময় যেগুলি লক্ষ্য রাখতে হবে সেগুলি হল:

        1.   এই রাস্তার মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে বাইক রিপেয়ারিং এর দোকান আছে তাই টিউব বা প্লাগ  এই ধরনের অত্যাবশ্যকীয় জিনিসগুলি না নিয়ে গেলে চলবে
        2.    গাড়ির স্প্রিট 40 থেকে 45 কিলোমিটারের মধ্যে রাখা বাধ্যতামূলক 
        3.     টুলকিট সাথে রাখা একান্তই প্রয়োজন 
        4.    এক্সট্রা তেলের ব্যারেল নেবার ততটা প্রয়োজন নেই কারণ এই রাস্তার মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণ পেট্রোল পাম্প পাওয়া যায় 

যদিও রাস্তায় যথেষ্ট পরিমাণ খাবারের দোকান পাবেন কিন্তু বর্তমান অবস্থান নিরিখে নিজের খাদ্য নিজেই বহন করা বাঞ্ছনীয় :

খাদ্য হিসেবে যেগুলি সাথে রাখতে পারেন :
        1.    ছোট বিস্কুট বা চানাচুরের প্যাকেট 
        2.    মুড়ি অথবা চিড়ে সাথে ছোট্ট এক প্যাকেট চিনি 
        3.    সিদ্ধ ডিম সাথে জ্যাম পাউরুটি থাকলেও মন্দ হয় না  
        4.    লুচি আলুরদম আর যদি সাথে আচার থাকে তবে তো সোনায় সোহাগা 
বারবার দাঁড়াতে হবে এই ভেবে আমিতো উপরের সবগুলোই সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম । বাইক চালানো ওই পনেরো-কুড়ি মিনিট ফাঁকে বেশ ভালোই টুকটাক চলছিল 

রামপুরহাট থেকে বিষ্ণুপুর রুট ম্যাপ নিচে দেওয়া হল :


রামপুরহাট থেকে  মোরগ্রাম পানাগর রোড ধরে সিউড়ি পৌঁছে জয়দেব মোর থেকে ডান দিকে যান । অজয় নদীর ব্রিজের কাছে একটি ব্রেক নিতে পারেন, এখান থেকে দুর্গাপুর ব্যারেজ পর্যন্ত সোজা রাস্তা ব্যারেজের কাছে একটি ভালো পিকনিক স্পট আছে সেখানে কিছুক্ষণ সময় কাটাতে পারেন । এখান থেকে বর্ধমান বাঁকুড়া রোড ধরে বেলিয়াতোড় কুসুমা রোডে আসুন , এখান থেকে বিষ্ণুপুর সোনামুখী রোড পাবেন । এই রাস্তার আশেপাশের পরিবেশ খুব সুন্দর কিছু বড় বড় কাজ পাবেন বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এই জায়গা গুলো অতুলনীয় ।

বিষ্ণুপুর পৌঁছানোর পর হোটেল নিয়ে বিশ্রাম নিন বিষ্ণুপুরে যথেষ্ট হোটেল আছে তাই আগে থেকে বুকিং করে গেলে বেশি খরচের সম্ভাবনা আছে বিডিও রোডের উপর হোটেল মোনালিসা তে আমরা ছিলাম প্রতিদিনের 800 টাকা ভাড়ার বিনিময় এই রাস্তায় এই ধরনের অসংখ্য হোটেল আছে একটু খুঁজলেই 800 থেকে 1200 টাকার ভিতর যথেষ্ট ভালো হোটেল পেয়ে যাবে যাবেন । (অনুরোধ রইল কোন দালাল চক্রের পড়বেন না এখানে যথেষ্ট পরিমাণে হোটেল আছে) 

এই পুরো যাত্রাটি প্রায় 5 ঘন্টা থেকে 5:30 ঘন্টা সময় লাগবে সামান্য বিশ্রাম নিন বিকালের দিকে ছিন্নমস্তা মন্দির ঘুরে দেখতে পারেন এবং পূজা দিতে পারেন 

বিষ্ণুপুর সাইটসিইং:

বিষ্ণুপুরে যদি মদনমোহন মন্দির এ ভোগ খেতে চান তাহলে সকাল সাতটার ভেতরে মন্দিরে গিয়ে বলে আসতে হয়। আপনি আমিষ খাওয়া পছন্দ করলে প্রথম যাত্রায় অংশগ্রহণ নাও করতে পারেন, তবে আমার একান্ত অনুরোধ একবার এই ভোগে অংশগ্রহণ করুন এর অনুভূতি অতুলনীয় । 
        বিষ্ণুপুরে দেখার সব জায়গাগুলোকে ক্রমান্বয়ে সাজালাম যাহা নিম্নরূপ এই অনুসারে কিলোমিটার সবথেকে কম হয়:

যদিও এই রাস্তায় প্রাইভেট গাড়ি টোটো এবং শেয়ার গাড়ি ও পাওয়া যায় কিন্তু এর ক্ষেত্রে কিলোমিটার যথেষ্ট বেশি হয় কারন কিছু ছোট রাস্তা যেগুলিতে টোটো বা অন্যান্য যাওয়া নিষিদ্ধ আছে।
এই ট্রিপ টা কমপ্লিট করার জন্য টোটো ভাড়া 700 থেকে 1000 টাকা, অন্যান্য প্রাইভেট গাড়িতে এর খরচ মোটামুটি 3000 টাকা কিন্তু যদি আপনি বাইক করে যান তাহলে মাত্র 15 থেকে 18 কিলোমিটার এর ট্রিপ যার খরচ 40 থেকে 50 টাকা।

আমি প্রথমে মদনমোহন মন্দির যাই এবং ওখানে খাবার জন্য অর্থ জমা দিয়ে বুকিং করি। এরপর ছিন্নমস্তা মন্দির এবং বাকি দেখার জায়গা গুলি একের পর এক দর্ষণ করি। নিজে যতক্ষণ ইচ্ছা ততক্ষণ শান্তিতে খুঁটিয়ে একটু জায়গা ভালোভাবে দেখি। এরমধ্যে রাস মন্দির এবং আরেকটি রাধাগোবিন্দ মন্দির যেখানে সামান্য কিছু টিকিটের জন্য খরচ হয়। এই অর্থ পুরাতত্ত্ব বিভাগ এই জায়গা গুলির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খরচ করে। বেশ কিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন সত্যিই দর্শনীয় এগুলো দেখার অনুভূতি সত্যিই মন কে অন্য পর্যায় নিয়ে যায়।

Comments