রামপুরহাট থেকে গরুমারা ও চাপড়ামারি জঙ্গলের ভেতর দিয়ে বিন্দু আর ঝালং যাত্রা আমাদের100 সিসি বাইক নিয়ে(100 cc bike at long trip)

 রামপুরহাট থেকে গরুমারা ও চাপড়ামারি জঙ্গলের ভেতর দিয়ে বিন্দু আর ঝালং যাত্রা আমাদের 100 সিসি বাইক নিয়ে(100 cc bike at long trip)


100 সিসি বাইক নিয়ে দূরে যাত্রা করতে গেলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নজর দেওয়া প্রয়োজন সেগুলি নিচে বর্ণনা করা হলো:

গাড়ি চালানোর সময় যেগুলি লক্ষ্য রাখতে হবে সেগুলি হল:

            1.    গাড়ি 40 থেকে 45 এর মধ্যে স্প্রিড ধরে রাখতে হবে
           2.    প্রতি 30 থেকে 35 কিলোমিটার অন্তর 15 মিনিটের ব্রেক দিতে হবে
           3.    সেই সময়ে চা বা অন্যান্য খাদ্যবস্তু সাথে নিন সময়টা কেটে যাবে
`          4.    একদিনে 200 কিলোমিটার এর বেশি বাইক ড্রাইভ করার উচিত নয় এতে 100 সিসি বাইকের ইঞ্জিনে ক্ষতি হতে পারে

100 সিসি বাইক নিয়ে দূরে যাত্রা করতে গেলে যে জিনিস গুলি সাথে নিয়ে যাওয়া একান্ত প্রয়োজন:

            1.     ব্রেক এর তার দুটি
            2.    দুটি এক্সট্রা  প্লাগ  
            3.    দুটি এক্সট্রা টিউব
            4.    যাত্রা শুরুর আগে টায়ার গুলো চেক করে নেয়া উচিত যদি তিন বা তার বেশি পাঞ্চ থাকে তাহলে চেঞ্জ করে নিতে হবে|
            5.    যদি তেল ট্যাঙ্ক ছোট হয় বা 6 লিটারের নিচে হয় তাহলে এক্সট্রা তেলের ব্যারেল বহন করা প্রয়োজন
            6.    টুলকিট সাথে রাখা একান্তই প্রয়োজন

রাস্তায় ধাবা তো পাবেন কিন্তু যতটা সম্ভব প্যাকেটজাত খাবার এবং সিদ্ধ খাবার ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন
                                            প্রয়োজনীয় খাদ্য বস্তু
1. 5 টাকার ছোট বিস্কুটের প্যাকেট 
2. 5 টাকার ছোট ছোলা ভাজা
3. 5 টাকার ছোট চানাচুর প্যাকেট
4. 5 টাকার টিফিন কেক
5. যদি ছাতু পছন্দ করেন তাহলে 200 গ্রাম ছাতুর  প্যাকেট দুটি বা তিনটি
6. এই ধরনের আপনার পছন্দের অন্যান্য খাবার তবে ছোট ছোট প্যাকেট নেবার চেষ্টা করবেন এতে খাবার নষ্ট কম হবে
                7.    ঈগল বা মিল্টন এর ফ্যাক্স সাথে নিয়ে নিন এতে চা 8 ঘন্টা মত গরম থাকে


প্রয়োজনীয় ঔষধ এর তালিকা
1. প্যারাসিটামল ফাইভ হান্ড্রেড 2. ভলিনি জেল বা ভোলিনি স্প্রে \ 3. ব্যান্ডেড 4. প্রোভাইডার আয়োডিন সলিউশন বা লাল
ওষুধ| 5. তুলা 6. সুদল বা বোরোলিন 7. ব্যান্ডেজ ক্রেপ ব্যান্ডেজ 8. অন্যান্য প্রয়োজনীয় ঔষধ 9. রেনিটিডিন বা রেনটেক বা জিনটেক

এবার আসা যাক রুট ম্যাপ এ

        1.    রামপুরহাট থেকে শিলিগুড়ি যাবার রাস্তা:

মল্লারপুর থেকে রামপুরহাট হয়ে নলহাটি দিয়ে নলহাটি রাজগ্রাম রোড ধরে ভাদেশ্বর রোড হয়ে রঘুনাথগঞ্জ মুরারয় রোড ধরে এনএইচ টুয়েলভ বা বাদশাহী রোড হয়ে মালদা টাউন বাইপাস হয়ে আদিনা তে পৌঁছানো যায় এখানেই রাত কাটান এই দূরত্ব প্রায় 186 কিলোমিটার আদিনা টল টেক্স টপকানোর পর মা দুর্গা লজ ও ধাবা এখানে মাত্র 500 টাকা মূল্যের খুব ভালো রুম পাওয়া যায় নিচে ম্যাপে তার লোকেশন দেওয়া আছে|

  

যাত্রা সকাল 3:30 থেকে শুরু করলে বেশি ভালো হয়
এতে আপনাকে সূর্যের অত্যাধিক তাপ বহন করতে
হবে না এবং এটি চেষ্টা করা উচিত দিনের বেলা 10:30
পর বাইক না চালাবার এতে টায়ার এবং টিউবের
অত্যাধিক গরমের কারণে পামচার হবার সম্ভাবনা
সবথেকে বেশি থাকে | নলহাটি থেকে এনএইচ টুয়েলভ
রাস্তা অত্যন্ত খারাপ তাই এই সময় গাড়ি খুব সংযতভাবে
চালান|


পরের দিন ঠিক তিনটে নাগাদ যাত্রা শুরু করুন ভোর বেলার মধ্যে রায়গঞ্জ পৌঁছে যাবেন | এইখানে জলখাবার সেরে নিন| এরপর কিছুদুর যাবার পরে এনএইচ টুয়েলভ থেকে রসাখোয়া রোড ধরুন এটি প্রায় 39 কিলোমিটার রাস্তা এরমধ্যে পেট্রোল পাম্প খুব কম থাকায় আগেই পেট্রোল ভরে নিন এই রাস্তা ধরে সোজা NH27 পৌঁছে যাবেন এটি শিলিগুড়ি রোড এই রাস্তা ধরে সোজা শিলিগুড়ি বাইপাস পৌঁছে যাবেন চেষ্টা করবেন সেবক রোড বা এর আশেপাশে ঘনবসতি তে রুম না নিয়ে বাইপাস রোডের আশেপাশে রুম নিন এবং এই রাত্রিটি শিলিগুড়িতে কাটান এটি আদিনা থেকে প্রায় 207 কিলোমিটার এর পথ|

এরমধ্যে বেশ কিছুটা রাস্তা চা বাগিচা এর পাশ দিয়েই যায় তাই ছবি তোলার জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা বেছে নিন এটি যথেষ্ট আনন্দ দেবে |

    2.    শিলিগুড়ি থেকে লাটাগুড়ি রুট ম্যাপ:

পরের দিকে যাত্রা শিলিগুড়ি থেকে শুরু করুন এখানে উল্লেখযোগ্য দুটি রাস্তা আছে লাটাগুড়ি পর্যন্ত একটি NH27 হয়ে যায় আরেকটি রাস্তা ক্যানেল রোড হয়ে যায় এই ক্ষেত্রে আমার মতে ক্যানেল রোড এ রাস্তাটি সবথেকে ভালো কারণ এর আশেপাশের পরিবেশ সত্যি খুব সুন্দর |
যাবার সময় ক্যানেল রোড ধরে জান এবং ফেরার সময় NH27 ধরে আসুন এটি এটি বেশি সুবিধাজনক ইহাতে দুটি রাস্তার আশপাশের সৌন্দর্য সঠিকভাবে উপলব্ধি করা সম্ভব | 

ক্যানেল রোড ধরে রুট ম্যাপ টি নিচে দেওয়া হল এবং বর্ণনা করা হলো


এই রাস্তাটি 69 কিলোমিটার রাস্তা এরমধ্যে গাজলডোবা তিস্তা ব্যারেজ এ দুপুরের খাবার খেয়ে নিন এখানে কল্পনা হোটেল এন্ড ধাবা একটি ভাল অপশন খুব কম খরচে দুপুরের মধ্যাহ্ন ভোজন কমপ্লিট করে তিস্তা ব্যারেজের আশেপাশের সুন্দর ছবি তুলে নিন এবং এর আশেপাশের অন্যান্য জায়গা গুলো একটু ঘুরে দেখতে পারেন কারণ এটি একটি ভ্রমণ স্পট |

রাত্রে লাটাগুড়ি তে থাকুন | চেষ্টা করবেন হোম স্টে নেভার এতে বাইকে সারা দিন জার্নি করার পর খাওয়ার জন্য অন্য কোথাও যেতে হবেনা কারণ হোম স্টে গুলিতে খাবার বা রাত্রে ডিনার করার সব ব্যবস্থা থাকে আমরা যে হোমস্টে তে রাত্রিযাপন করেছিলাম তার ডিটেলস নিচে দিলাম| 



লাটাগুড়ি তে এক দিন কাটাতে পারেন সকালবেলা পাঁচটার মধ্যে গরুমারা জঙ্গল সাফারি জন্য গাড়ি বুক করে নিতে হবে এবং সারাদিন এই জঙ্গলে ভ্রমণ করে বন্যপ্রাণী দেখার এবং জঙ্গলের অপরূপ পরিবেশ উপভোগ করার আনন্দ নিন|
এটি সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং মাথাপিছু দেড়শত থেকে দুইশত টাকা নিয়ে এই বুকিং করা হয় এছাড়াও হাতির পিঠে এই জঙ্গল ভ্রমণ করতে পারেন তার খরচ কিছু বেশি লাগে|

    3.    লাটাগুড়ি থেকে ঝালং যাবার রাস্তা

এই রাস্তায় পেট্রোল পাম্প নেই তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ তেল সংগ্রহ করুন তারপরেই এই যাত্রা শুরু করুন

লাটাগুড়ি থেকে দিনের আলোয় আটটা থেকে নটার মধ্যে বেরিয়ে পড়ুন চলে যান 18 কিলোমিটার দূরে মূর্তি রিভার এইখানে সকালের জলখাবার সেরে নিন এই মূর্তি রিভার একটি সুন্দর পরিবেশে এবং নদীর একটি সুন্দর দৃশ্য নিজের চোখে দেখে নিন এখানে 2 থেকে 3 ঘন্টা চোখের পলকে কেটে যাবে দয়া করে সেতুটির অপরদিকে যাবেন না এটি গরুমারা রিজাভ ফরেস্ট এর নিয়ন্ত্রিত জঙ্গল এখানে কাউকে গাড়ি দাঁড় করাতে দেওয়া হয় না কিন্তু নদী পারাপার না করে আপনি এইখানে সময় কাটান এবং নদীর অপরূপ পরিবেশের ছবি নিন আনন্দ নিন|



সময় কাটানোর পর গাড়ি নিয়ে মূর্তি নদী ব্রিজ পার হন এবং না দাঁড়িয়ে এগিয়ে চলুন NH27 এর দিকে এই রাস্তাটি গরুমারা রিজাভ ফরেস্ট অন্তর্ভুক্ত এইখানে দিয়েই জঙ্গল সাফারি করানো হয়| 

এই জঙ্গলের ভেতর দিয়ে গাড়ি চালাবার বা বাইক চালাবার দারুন  আনন্দ  উপভোগ করা যায় দুই দিকের ঘন জঙ্গল মনকে ভরিয়ে দেয়| 

NH27 পার করার পর আবার চাপড়ামারি জঙ্গলের ভেতর দিয়ে প্রায় 15 কিলোমিটার রাস্তা কুমাই পর্যন্ত এই অপরূপ পরিবেশের কিছু ছবি আমি নিচে দিলাম


কুমাই



এরপরে ঝালং পর্যন্ত সম্পূর্ণ পাহাড়ি রাস্তা এবং 100 সিসি বাইকের জন্য এটি যথেষ্ট কষ্টসাধ্য তাই দয়া করে 30 থেকে 45 মিনিট গাড়িটিকে ঠাণ্ডা করুন এবং গাড়ির ইঞ্জিন সম্পূর্ণ ঠান্ডা হওয়া অব্দি অপেক্ষা করুন  |প্রয়োজনে খাওয়া-দাওয়া করে নিতে পারেন এখানে খাওয়া দাওয়ার জন্য ছোটখাটো দোকান আছে |
গাড়ি তেল চেক করে নিন | 

100 সিসি গাড়ির জন্য পাহাড়ি রাস্তায় কিছু সতর্কবার্তা।

                1.    গাড়িতে সব থেকে ভারী লাগেজ কে সামনের দিকে নিন।
                2.    পেছনের ব্যক্তি কে যতটা সম্ভব আপনার দিকে চেপে বসতে বলুন|
                3.    গাড়ি উপরদিকে ওঠার সময় এক্সেলেটর এর সাথে অন্য হাতে ব্রেক ধরে প্রস্তুত থাকুন কারণ যদি এক্সপ্লোরেশন কাজ না করে তাহলে গাড়ি পেছনদিকে দ্রুত যেতে শুরু করবে পাহাড়ি রাস্তায় এটি কন্ট্রোল করা খুবই কষ্টসাধ্য তাই সচেতন থাকা বাধ্যতামূলক |
                4.    ইউটার্ন নেওয়ার সময় যতটা সম্ভব রাউন্ড করে গাড়ি উপর দিকে তুলতে হবে|
                5.    10 থেকে 12 কিলোমিটার অন্তর ইঞ্জিন ঠান্ডা করুন |

ঝালং যাবার পথ এর কিছু ছবি নিচে দেওয়া হল





ঝালং পর্যন্ত রাস্তা সম্পূর্ণ পাহাড়ি এবং এই রাস্তাতে 100 সিসি বাইক চালানো একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা যা বর্ণনা করা হয়তো বাক্য দ্বারা সম্ভব নয়। এটি একটি স্মৃতি যা সারা জীবন আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে | 

ঝালং বিন্দু তে থাকার কিছু জায়গা বা হোমস্টে



গ্রীনভ্যালী হোমস্টে ঝালং

এরমধ্যে রামরি হোম স্টে তে আমরা ছিলাম যার অভিজ্ঞতা সত্যি অভাবনীয়। এই হোমস্টেড মালিক একজন আর্মি অফিসার তার একটি ইন্টারভিউ আমি আমার ইউটিউব চ্যানেলে দেব।
এনাদের ব্যবহার এবং আতিথেয়তা সত্যি বর্ণনাতীত আমার খুবই সৌভাগ্য আমি এই ধরনের একটি হোমস্টে 2 দিন কাটাবার সুযোগ পেলাম এখান থেকেই পরের দিন আমরা বিন্দু যাত্রা করি সেখানে সারাদিন কাটানোর পরে আমরা ফিরে আসি আবার এই হোম স্টে তে |

বিন্দুর কিছু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছবি নিচে দিলাম









Comments