রামপুরহাট থেকে মিরিক হয়ে কালিংপং এবং লাভা ও রিশপ যাত্রা ১০০ সিসি বাইক নিয়ে।

 রামপুরহাট থেকে মিরিক হয়ে কালিংপং এবং লাভা ও রিশপ যাত্রা।100 সিসি বাইক নিয়ে(100 cc bike at long trip)


100 সিসি বাইক নিয়ে দূরে যাত্রা করতে গেলে সংক্ষিপ্ত যাত্রা বর্ণনা এবং আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র সম্পর্কে একটি সুনির্দিষ্ট ধারণা:


আনুষঙ্গিক অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্র:

১.      একটি জল গরম করার ফ্লাক্স। ম্যাক্সিমাম জায়গায় জল কিনে খেতে হবে, কারণ পাহাড়ের জল খাবার জন্য আমাদের উপযুক্ত নাও হতে পারে এতে পেটের প্রবলেম হবার সম্ভাবনা আছে।
Link:- 
২.      একটি ক্যামেরা, ভালো কোয়ালিটির একটি মোবাইল হলেও চলে, যদি GO PRO থাকে তবে তো সোনায় সোহাগা।
৩.     রাস্তায় খাবার জন্য কাগজের প্লেট।
৪.      পেতে বসার জন্য ছোট একটি চাদর বা গামছা।
৫.      একটি জলখাবার বোতল ( মিল্টন বা শেলো কম্পানির প্লাস্টিক বোতল হলে ভালো হয় এতে জল অনেকক্ষণ ঠান্ডা থাকে আমি নিজে ব্যবহার করে বলছি প্রায় চার থেকে পাঁচ ঘন্টা)
৫.       গাড়ির পেছনে বাঁধার জন্য অতিরিক্ত কিছু দড়ি।
৬.       গাড়ির মতো উপযুক্ত ব্যাগ যেটি গাড়িতে বাধতে সুবিধা হয়।
৭.        কিছু চটজলদি খাবার যার নিম্নোক্ত তালিকা দেওয়া হল।
৮.       বৃষ্টি থেকে জিনিসপত্র কে বাঁচানোর জন্য বড় প্যাকেট ( প্রয়োজনে কাপড় বিক্রেতাদের কাছ থেকে প্যাকেটটি সংগ্রহ করুন এগুলো খুব শক্ত এবং টেকসই হয়)
৯.       নিজেদের প্রয়োজনীয় যৎসামান্য কাপড়চোপড় এগুলো বাইকে চাপার জন্য উপযুক্ত হলে বেশি ভালো।
১০.      দুটি বর্ষাতি নিজেদেরকে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচাবার জন্য।
১১.      দুটি টিফিন বক্স প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করে নেবার জন্য।


খুবই লক্ষণীয় কিছু সতর্কতাঃ- 

১.        বাইকে প্যাকগুলি যতটা সম্ভব শক্ত করে বাঁধা ভালো।
২.        বাইকের কাগজপত্র সবকিছু সঠিক করে রাখবেন এবং সাথে রাখবেন।
৩.        প্রয়োজনে ডিজিটাল ডকুমেন্টেশন দেখানো সম্ভব কিন্তু সে ক্ষেত্রেও অনেক সময় পুলিশ অরিজিনাল ডকুমেন্ট দেখতে চায়।
৪.         যদি সিকিম যেতে চান তবে অবশ্যই অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করে নেবেন লিংক নিচে দেওয়া রইল।
৫.         গাড়ি সারানোর সমস্ত টুলকিট অবশ্যই সাথে নেওয়া উচিত এতে নিরাপত্তা বজায় থাকে।
৬.        100 সিসির গাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন তাই অবশ্যই গাড়ির গতি বেগ 40 থেকে 50 এর ভেতরে রাখুন তার থেকে বেশি বাড়াবাড়ি চেষ্টা করবেন না এতে গাড়ির ক্ষতি হয়।
৭.         অনেকেই বলবে হান্ড্রেড সিসি গাড়ি নিয়ে এক দিনে সাড়ে চারশো কিলোমিটার যাওয়া যায়, কিন্তু আমি বলব গাড়িতে যাচ্ছেন কোনো কম্পিটিশন করতে যাচ্ছেন না তাই গাড়ি আড়াইশো কিলোমিটারের বেশি একদিনে চালানো মোটেই উচিত নয় হান্ড্রেড সিসির ইঞ্জিন এর ক্ষমতা যথেষ্ট কম সেদিকে  সচেতনতা রাখা উচিত।
৮.      গাড়ির ইঞ্জিন ওভার হিট হয়ে গেলে সাসপেনশন ইঞ্জিনে জল দিতে পারেন অনেকে বলে এতে ইঞ্জিন এর ক্ষতি হয় কিন্তু এটি গাড়ির জন্য কোন খারাপ নয় তবে বারবার না করাই ভালো।
৯.       যদি ইঞ্জিন অয়েল হাজার কিলোমিটারের পুরনো হয়ে যায় তবে সাথে এক লিটার নতুন ইঞ্জিন অয়েল নিশ্চয়ই রাখবেন (ক্যাস্ট্রল বা হিরো কোম্পানির ইঞ্জিন অয়েল মোটামুটি ভালো).
১০.      যে গাড়ি নিয়ে দূরে যাত্রা করতে চাইছেন তাতে মাইলেজ বাড়ানোর কোনো গেজেট ব্যবহার করবেন না এবং ইঞ্জিনের পর্যাপ্ত পরিমাণ তেল ছেড়ে  রাখবেন তেল ধরে রেখে লংটাইম গাড়ি চালালে গাড়ির ইঞ্জিন প্রচন্ড গরম হয়ে যায়।
১১.      একটানা 40 কিলোমিটার এর বেশি করবেন না সামান্য একটু ব্রেক দিন এবং সেই সময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করুন আমার লেখার মধ্যে আমি রাস্তায় সেরাম কিছু ব্রেক দেবার মত পয়েন্ট দিয়ে দেব যেখানকার আশপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ফটো তোলার জন্য উপযুক্ত।
১২. দুটি এক্সট্রা টিউব নতুন।
১৩. দুটি এক্সট্রা প্লাগ।
১৪. পিছনের ও সামনের একটি করে ব্রেক এর তার।
১৫. গাড়ি যদি গিয়ার সমেত হয় তবে ক্লাচ এর তার একটি।



আনুষঙ্গিক খাদ্যপণ্য যাত্রাকে আরো মধুর করে দেবে:-

১.       5 টাকার কেকের প্যাকেট।
২.       5 বা 10 টাকার বিস্কুটের প্যাকেট।
৩.      500 চানাচুর বা ঝুরি ভাজা কিনে ছোট ছোট প্যাকেটে ভাগ করে ব্যাগে রাখুন রাস্তার মধ্যে খেতে সুবিধা হয়।
৪.       পাঁচ টাকা দশ টাকার চাল ভাজা বা চিরে ভাজা প্যাকেজ নিতে পারেন চায়ের সাথে অসাধারণ লাগে।
৫.       মিল্টন বা ঈগল কোম্পানির একটি গরম চায়ের ফ্লাস্ক কিনে নিন এটি রাস্তায় চা খাবার জন্য অত্যন্ত উপযোগী ( আমার কাছে একটি ঈগল কোম্পানির ফ্লাক্স আছে এটিতে চা প্রায় 8 থেকে 9 ঘণ্টা গরম থাকে).
৬.       পাহাড়ি জায়গায় ঠান্ডার কারণে কফি খেতে খুব ইচ্ছা হয় তাই দুটাকার কফির প্যাকেট দশ-বারোটা নিজের কাছে রাখুন।
৭.        কফির সাথে তো দুধ চিনি লাগবেই, তাই দুধের ও 5 টাকার প্যাকেট নিজের কাছে রাখুন।
৮.       100 গ্রামের ছাতুর প্যাকেট সাথে রাখবেন খুব ভালো হয় যদি সত্যেন্দ্র ছাতু রাখেন এটি জলে গুলে খেতে ভালো লাগে।
৯.        ছাতু গোলার জন্য একটি বড় মগ আরেকটি কাঁটা রাখুন।
১০.      দামি লিকার চায়ের টি ব্যাগ কিনে রাখুন যেগুলি খুব সহজে চা করে দেওয়া যায় গরম জল সহযোগে।
১১.      সারাদিন বারবার গাড়ি দাঁড়িয়ে করিয়ে চা খেতে গেলে, সেই চা অবশ্যই গ্রিন টি হতে হবে এবং দুধ ছাড়া লিকার চা খাওয়া উচিত এতে শরীর সুস্থ থাকে।

বাসস্থান হোটেল ও অন্যান্য খরচ

এর বিস্তারিত আলোচনা ঠিকানাসহ একদম শেষ পংক্তিতে দেওয়া আছে প্রয়োজন হলে সংগ্রহ করে নেবেন। যাহারা কম খরচে ভ্রমণ করতে চান তাদের জন্য আশা করি নিম্নের ঠিকানায় জায়গাগুলি যথেষ্ট উপকার করবে। কারণ আমি যে জায়গা পছন্দ করি সেগুলো যথেষ্ট দরদস্তুর করে তবে নি, তাই খরচ সর্বনিম্ন হয় এবং জায়গা গুলির ফেসিলিটি খরচের তুলনায় যথেষ্ট ভালো।

আমরা যে রাস্তা অনুসরণ করে এই ট্রিপটি কমপ্লিট করেছি সেটি সংক্ষিপ্ত নিম্নরূপ:

     মল্লারপুর থেকে শুরু করে রামপুরহাটের পথে নলহাটি পর্যন্ত, এরপরে নলহাটি মোড় থেকে নলহাটি মুরারৈ রোড ধরেবাদশাহী রোড বাদশাহী রোড পড়ার পরে একদম সোজা বাদশাহী রোড ধরে আদিনা (মালদা রোড বাইপাস দিয়েও আদিনা পৌঁছানো যায় আমার মতে বাইপাস রোড ধরা বেশি ভাল মালদার ভিতর প্রচন্ড জ্যাম হয়)।
    আদিনা ক্রস করে সোজা রাস্তা পৌঁছে যাবেন রায়গঞ্জ রায়গঞ্জ বাইপাস ধরা বেশি ভালো যদিও এতে দু'কিলোমিটার বেশি লাগে এই রাস্তা ধরে সোজা গিয়ে বোতল বাড়ি মোড়। এখান থেকে ডান দিকে ঘুরে রাসা খাওয়া রোড ধরে প্রায় 46 কিলোমিটার যাবার পর পড়বে এনএইচ টু এইটিই শিলিগুড়ি রোড, এই রাস্তা ধরে ডান দিকে ঘুরে সোজা চলে গেলে পড়বে শিলিগুড়ি।
 শিলিগুড়ি থেকে আরো 47 কিলোমিটার গেলে মিরিক এটি সম্পূর্ণ পাহাড়ি রাস্তা  তাই এই রাস্তা ধরার আগে গাড়িকে যথেষ্ট রেস্ট দিয়ে নিন বা ঠান্ডা করে নিন। মিরিক এর রাস্তার বেস কিছু মুহূর্তের এমনি বেশি চড়াই আছে যে গাড়িকে তার আগে থেকে রেস দিয়ে নিতে হবে। নিচে এই বিষয় বিস্তারিত আলোচনা অংশে এই পয়েন্টগুলো কিলোমিটার সময় দেওয়া আছে।

মিরিক পৌঁছানোর পরে আপার মিরিক থেকে মাত্র 7 কিলোমিটার মিরিক লেক, এর আশেপাশের পরিবেশ যথেষ্ট সুন্দর বাইক নিয়ে এর আশপাশের জায়গা গুলি ঘুরে দেখা যেতে পারে, খুব একটা চড়াই উৎরাই নেই।
মিরিক থেকে শিলিগুড়ি হয়ে কালিংপং পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় 78 কিলোমিটার যার মধ্যে 30 কিলোমিটার ডাউন তারপরে 22 কিলোমিটার মোটামুটি সমতল এবং যে 25 অথবা 26 কিলোমিটার পড়ে থাকে সেটি প্রচন্ড পরিমাণ চড়াই এবং এর বেশ কিছু অংশের গাড়িতে 100cc হওয়ার জন্য অসুবিধা হতে পারে। নিচের বিস্তারিত আলোচনায় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করা হয়েছে চলার পথে পাথেয় হয়ে উঠবে বলে আমার ধারণা। কালিংপং থেকে কালিম্পং সাইটসিং কমপ্লিট করার জন্য 30 থেকে 32 কিলোমিটার বাইক চালাতে হবে এটি পুরোটাই পাহাড়ি রাস্তা আশপাশের পরিবেশ সত্যিই অপরূপ। কালিংপং থেকে লাভা ভিউ পয়েন্ট এবং ভিন্য ভিউ পয়েন্ট হয়ে আবার কালিংপং ফিরে আসার দূরত্ব প্রায় 66 কিলোমিটার যার বিস্তারিত আলোচনা নিচে দেওয়া আছে।

চলুন আমার সাথে ঘুরতে মিরিক কালিম্পং এবং লাভা রিশপ ভিউ পয়েন্ট ১০০ সিসি বাইক নিয়ে।

১১.১১.২১(রাত্রি)
আজ ১১ তারিখ রাত্রিটা বৃষ্টিভেজা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়ে চলেছে প্রায় সারা রাত। এরই মধ্যে আমরা দুজনে আমাদের বেড়াতে যাবার শেষ প্রিপারেশন করতে শুরু করে দিয়েছি। জিনিসপত্রগুলো কে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিতে বেশ কিছুটা সময় লেগে গেল, রাত্রি খেতেও বেশ কিছুটা দেরি হয়ে গেল, কাল সকালেই আমরা বেরোবো তার একটি অস্বাভাবিক আনন্দ মনের ভেতরে ছন্দ মিলিয়ে গান করে চলেছে। হঠাৎ করে ও আমাকে বলল: সবই তো রেডি আছে কিন্তু গাড়ির টুলকিট টা নেওয়া হয়নি চলো ওটাকে বার করি। আর ভুলো না যেন ওর সাথে পেট্রোল নেবার এক্সট্রা ব্যারেল তাও নিতে হবে,
ও মনে করিয়ে দিতেই আমার মনে পড়ল সত্যিই তো খুব বড় ভুল করে ফেলেছি তাই ব্যাগ বের করে সবকটা জিনিস খুব তাড়াতাড়ি করে গুছিয়ে নিলাম। কাল ভোর চারটের সময় বেরোবো সুতরাং সারাদিন গাড়ি চালাতে গেলে ঘুমেরও একটু প্রয়োজন আছে, দুজনের চট করে হালকা ভাত ডাল আলু সেদ্ধ খেয়ে শুয়ে পড়লাম।

১২.১১.২০২১(দিনরাত্রি)
যেখানেই যাই আমরা সবসময় দুজনেই যাত্রা শুরু করি যার জন্য অন্য কোনো বাধার সম্মুখীন আমাদের হতে হয় না, আমাদের ডিসিশন ই ই ফাইনাল, তাই সকাল সকাল বেরোনোর ক্ষেত্র খুব একটা প্রবলেম আমাদের হয় না, তবুও, রাত দুটো থেকেই আমার ম্যাডাম খোঁচা দিয়ে চলেছে; বের হতে দেরি হলে কিন্তু আমাদের অসুবিধে হতে পারে তাই চলো তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ি।
আমি বললাম: ওগো এখনতো রাত দুটো অন্ধকারে কোথায় যাবে।
যাক শেষ পর্যন্ত রাত্রি তিনটে নাগাদ আমরা উঠে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করলাম। গাড়ি আগের দিন রাত্রেই বেঁধে ছেদে রেডি করা ছিল তাই নিজেদেরকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েই আমরা বেরিয়ে পড়তে পারি।
শুভস্য শীঘ্রম নিজেদের বেশভূষা রেডি করলাম, পায়ে লেক গার্ড, হ্যান্ড গার্ড, হেলমেট সাথে সকাল বেলার ঠান্ডা পরিবেশের জন্য উইন চেটার টি ও।
যাক বের হয়ে পড়লাম নিজেদের লক্ষ্যে। আমরা প্ল্যান করেছিলাম আমরা একদিনে আদিনা পর্যন্ত যাব তার বেশি যাব না। আগের বারে যখন ঝালং এবং বিন্দু গিয়েছিলাম তখন আদিনাতে যে মা দুর্গা হোটেলে ছিলাম। এই বারেও ওই খানেই থাকবো। বের হবার পরেই প্রায় টানা 40 কিলোমিটার গাড়ি চালালাম কারণ তখন যথেষ্ট অন্ধকার ছিল এবং ঠান্ডা থাকতে থাকতে বাইক চালাতে খুব সুবিধা হয়।
প্রথম 40 কিলোমিটার যাওয়ার পর বেশ একটু খিদে পেয়ে গেল, তাই দাঁড়িয়ে রাস্তার ধারে একটি মনোরম পরিবেশে নিজেদের টিফিন কমপ্লিট করলাম।

আকাশটা এখন পরিষ্কার সূর্য ওঠার আভা বেশ বোঝা যাচ্ছে পূর্বকোনে।
এই জায়গাটি নলহাটি মুরারই এর মধ্যেখানে পড়ে, আগেই বলে রাখি নলহাটিতে থেকে দুটোই রাস্তাই কিন্তু বাদশাহী রোড এ গিয়ে মেসে, আমাদের আগের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা নলহাটি থেকে বাম দিকের রাস্তা ধরলাম যেটা মুরারই রোড হয়ে বাদশাহী রোড পর্যন্ত যাচ্ছে। কারণ এই রাস্তাটি যথেষ্ট ভালো রাস্তার আশপাশের পরিবেশ খুব সুন্দর, জায়গা পাওয়া যায় বেশ কিছু যেখানে দাঁড়িয়ে একটু ফটোসেশন করে নেওয়া যেতেই পারে, যদিও আমরা একবারই দাড়ালাম শুধুমাত্র টিফিন করার জন্য।
 দুপাসাড়ি সবুজ ধান ক্ষেত বাঁ পাস দিয়ে একটি ইরিগেশন ক্যানাল এ জল বয়ে চলেছে। এর পরের বেশিরভাগ জায়গায় বসে খাওয়ার জন্য যথেষ্ট সুন্দর অনেক পাখীর সমাগম হয় এর আশেপাশে।
একটি গাছের উপরে একাধিক সাদা ফুল দেখেছিলাম ভেবে দাঁড়ালাম কিন্তু পরে দেখলাম সেগুলো সব এক ঝাঁক বক সত্যিই দেখার মতো ছিল সেই দৃশ্য তাই দাঁড়িয়ে ছবি ও তুললাম।
+++++++++
এখান থেকে যখন শুরু করলাম তখন ঠিক সাড়ে সাতটা বাজে, এগিয়ে চলেছি বাদশাহী রোড এর দিকে বেশ কিছুটা যাবার পরে বাদশাহী রোড পৌঁছালো, এরপরের রাস্তাটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কারণ হাই রোডের রাস্তা।
এখানে নিশ্চিন্তে গাড়ি অ্যাভারেজ 45 বা 50 এ নিয়ে যাওয়াই যায়। এরপরে ফারাক্কা যাওয়ার পথে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার বাদশাহী রোড ধরে গেলে, একটা বড় বাঁক আসে ঠিক এর পাশেই একটি ফাঁকা জায়গায় আছে, এখানে বাইকটি স্টপ করে আমরা টি ব্রেক নিলাম কারণ এর মধ্যে আমরা প্রায় 40 কিলোমিটার চলে এসেছি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম তখন প্রায় নটা বাজে।  তাই এরপরে ফারাক্কা বাইপাস পর্যন্ত আমরা আর কোন স্টপ নিলাম না, প্রায় টানা 50 কিলোমিটার বাইক চালালাম। ফারাক্কা বাই পাসের ধারে দাঁড়িয়ে একটু 15 মিনিটের টি ব্রেক দিয়ে সোজা পৌছালাম মালদা বাইপাস। মালদার ভেতর দিয়ে না যাওয়াই ভালো কারণ এখানে প্রচন্ড জ্যাম হয়। এই জাম থেকে নিজেকে বাঁচাবার সবথেকে ভালো রাস্তা হল মালদা বাইপাস। মালদা বাইপাস থেকে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার সোজা গেলে পড়ে আদিনা। আদিনা তে ডিয়ার পার্কে রাস্তাটা পার করে, ৭ কিলোমিটার যাবার পর টোল টেক্স পয়েন্ট পার হয়ে বামদিকে মা দুর্গা ধাবা ও হোটেল। 
++++++++++

এর উপরে থাকার সুবন্দোবস্ত আছে 500 টাকা একদিন, এছাড়াও এখানে চব্বিশ ঘন্টা খাবার বন্দোবস্ত আছে ন্যায্য মূল্যে। আমরা 1:30 মিনিটে এখানে পৌছালাম, হাতে যথেষ্ট সময় আছে তাই জন্য দুজনে ঠিক করলাম, আজ আমরা আরও কিছুটা এগিয়ে যাব, রায়গঞ্জ হবে আমাদের আজকের লক্ষ্য। ভাবা মাত্রই তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে গাড়িটাকে প্রায় 45 মিনিটের রেস্ট দিয়ে নিয়ে,  যাত্রা করলাম রায়গঞ্জের দিকে প্রায় 40 কিলোমিটার রাস্তা মোবাইলে পৌঁছাবার সময় দেখলাম বিকেল 4:30।
 তাই ঠিক করলাম এরপরে রাস্তায় আমরা আর কোন রেস্ট নেবো না। রায়গঞ্জ পৌঁছাতে আমাদের সময় লেগে গেল প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা, গাড়িটা লং চালাবার জন্য একটু আস্তে চালিয়েছিল। রায়গঞ্জের থাকার মত হোটেল পেলাম মাত্র তিনটি, তিনটি হোটেলে ই রায়গঞ্জ ম্যান সিটির ভিতরে।
১. হোটেল এম্বাসি
২. Oyo hotel ও হোটেল বাদশা
৩. হোটেল ইম্পেরিয়াল

যদিও হোটেলের রুম পেতে গেলে যথেষ্ট দরকষাকষি করতে হয়। প্রথমেই বাদশা হোটেল ও হোটেল ইম্পেরিয়াল যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ এখানে সর্বনিম্ন ঘর ভাড়া প্রায়১২০০ টাকা। তবে এই দুটি হোটেলেই একটা বার ও ট্যাব আছে। প্রয়োজনের হোটেলের ভেতরে ও প্রয়োজনীয় পান সামগ্রী নিয়ে যেতে পারবেন।
তবে আমি রুমে ছিলাম' হোটেলে এম্বাসি তে।
তবে প্রথমেই বলি এই হোটেলে পান সামগ্রী ভেতরে নিয়ে যাওয়া যাবে না এর লাগোয়া রাস্তার উপরে এই হোটেলটি নিজস্ব বার কাম রেস্টুরেন্ট আছে সেখানেই কাজ সারতে হবে। তবে হোটেলে নিজস্ব খাবার রেস্টুরেন্ট আছে ভেতরে যদি শুধুমাত্র হোটেলে যারা থাকছেন তাদের জন্যই খোলা। কিন্তু একটু আগেভাগে অর্ডার দিতে হয় না হলে খাবার খেতে অনেক দেরি হয়। অনেকে দর কষাকষির পর আমি এই হোটেলে  ৩৫০ টাকায় একটি রুম পেলাম। যটি এক কথায় সর্বনিম্ন তবে ঘরের কন্ডিশন যথেষ্ট ভালো। একরাত্রি মাত্র ৭ থেকে ৮ ঘন্টা কাটাবার জন্য এর থেকে ভালো ঘরের প্রয়োজন হয় না। তবে ননএসি ডবল রুম প্রায় ১২০০ এসি রুম ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা আছে।

১৩.১১.২০২১(দিনরাত্রি)

আমরা যাত্রা শুরু করার প্ল্যান করলাম প্রায় ভোর সাড়ে তিনটের সময়। যদিও মালপত্র গাড়িতে বাঁধাছাদা করতেই সাড়ে তিনটে বেজে গেল, এরপরে দারোয়ানকে ডেকে গেট খুলিয়ে আমাদের বের হতে প্রায় চারটে বেজে গেল। গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে ঘন কালো অন্ধকারের বুক চিরে এগিয়ে চলার এক অসাধারন অনুভুতি তখন মনকে আচ্ছন্ন করছে, এই আচ্ছন্নতার মধ্যে কখন যে আমরা হাইরোড ধরেছি ঠিক বুঝতে পারিনি। পূর্ব আকাশে অন্ধকারের উপরে রাজত্ব করতে ধীরে ধীরে আলোর ছটা যেন এগিয়ে চলেছে উদ্দাম গতিতে। গাড়ির হেড লাইট টা বন্ধ করে দিলাম এক্সপ্রেশ ওয়ের পাশের বাইপাসে মানুষ শরীরচর্চা করে চলেছে কেউ করছেন ব্যায়াম কেউবা হন্টন, শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ঘর্মাক্ত করছেন তাদের শরীর, করোণা পরিবেশে মানুষ আর কিছু শেখুক বা না শিখুক নিজের শরীরটার দিকে যে যথেষ্ট আগ্রহী সে ব্যাপারটা পরিষ্কার, বাবা-মায়ের পায়ের তালে তাল মিলাতে পেছনে বাচ্চাগুলো রীতিমতো দৌড়চ্ছে।  তাদের লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে চলার আর বড় বড় পায়ের শক্তির সাথে নিজেদের ছোট্ট ছোট্ট ক্ষমতাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলার জন্য অদম্য প্রচেষ্টা তা দেখতে দেখতেই এগিয়ে চললাম নিজেদের দ্রষ্টব্যে।

রায়গঞ্জ পেরিয়ে বোতল বাড়িমোড়ে যখন আমরা এসে পৌছালাম তখন প্রায় সকাল ৬.৪৫। বোতল বাড়ি রাসাখাওয়া রোড ধরে কিছুটা এগোনোর পর পরি পেটের ভেতরের ইঁদুরগুলো নাচানাচি করতে শুরু করলো। নেভিগেটর  ম্যাডামের এক ধমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম একটি লুচি তরকারি দোকানের সামনে গরম গরম লুচি আর ঘুগনি ধূমায়িত সাদে মনকে তৃপ্ত করতে শুরু করলাম।

এইখানেই আমরা ঠিক করে নিলাম এরপরে আর বেশি বার দাঁড়াবো না এখন এখান থেকে আমাদের লক্ষ্য শিলিগুড়ি যা আমাদের সাড়ে বারোটা একটার মধ্যে পৌঁছাতে হবে। এক বয়স্ক চাচা আমাদের বাইকের দিকে তাকিয়ে আমাদের জিজ্ঞেস করেই ফেললো- "ভাই তোমরা যাবে কতদূর?" আমি বেশ কনফিডেন্স নেই বললাম "কাকু আমরা কালিংপং থেকে লাভা লোলেগাঁও যাবার প্ল্যান করেছি।" ভদ্রলোক আমার মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়েই বললো "তোমরা কি পুরো রাস্তা এই গাড়ি নিয়ে যাবে?" আমি আনন্দ সাথেই বললাম হ্যাঁ কাকু। তখন কাকু তার ইয়ং বয়সের কিছু  দুর্ধর্ষ বাইকে চাপার এবং লম্বা যাত্রা করার কাহিনী আমাদের বর্ণনা করতে শুরু করলেন। আমাদের এই যাত্রা করার ইচ্ছা যে ওনা কেউ ওনার ছোট বয়সে ফিরে যাবার অনুভূতি দিচ্ছে, এটা ভেবে আমার খুব ভাল লাগছিল, দেখলাম বাবাই উনার মুখের দিকে এক নজরে তাকিয়ে গল্প গুলো শুনছে। এইরে আবার একটা নতুন নামে ডেকে ফেললাম আসলে আমি আমার ধর্ম পত্নীকে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন সময় ডেকে থাকি যার মধ্যে নেভিগেটর, ম্যাডাম, বাবাই এবং বাবু এগুলো অন্যতম তাই এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে আমার সাথে অন্য কেউ আছে, শুধু একমাত্র আমার জীবন সাথী আমার পত্নী ছাড়া অন্য কেউ নেই। যাক ওর সাথে গল্প করতে করতে চারিদিকের আকাশটা প্রায় পরিষ্কার হয়ে এলো আমরা ভেবেইছিলাম যে রাসাখাওয়া রোড আমরা অন্ধকারে পাড়ি দেব না কারণ বিভিন্ন রাইডার এবং তাদের অভিজ্ঞতা যা আমি আর.শি.বি গ্রুপে পড়েছিলাম বা শুনেছিলাম তাতে সবাই একই কথা বলে যে এই রাস্তায় রাতের অন্ধকারে না যাওয়াটাই শ্রেয়। সুতরাং এবার আমাদের যেতে আর কোন অসুবিধে ছিল না বেরিয়ে পড়লাম এক্সপ্রেসওয়ে ছেড়ে এবার জেলা পরিষদ রোড ধরে নতুন এক্সপ্রেস বইয়ের সন্ধানে এনএস১২ বা শিলিগুড়ি রোড।
প্রায় 45 কিলোমিটার রাস্তা এরমধ্যে মাত্র একবারই গাড়ি দাঁড় করিয়েছিল কারণ ওই জায়গাটায় দাঁড়াবো সেটা বাবাই অনেক আগেই বলেছিল, আগের বছরে যখন আমরা দার্জিলিং ও ঝালং বিন্দু ট্রিপ করেছিলাম তখন এই খানেতে আমরা ঘন্টা দুই তিন বসে ছিলাম, এবারেও তার অন্যথায় হয়নি, যদিও সময়টা ছিল মাত্র আধ ঘন্টা। প্রায় সাড়ে আটটার সময় যখন আমরা ওই জায়গায়  পৌছালাম তখন প্রচন্ড ঘন কুয়াশার মধ্যে আটকে পড়লাম রাস্তার চার ফুট দূরে ও কিচ্ছু  দেখা যাচ্ছে না। অন্যথায় বাধ্য হয়ে এই জায়গায় গাড়ির স্প্রিট কিছুটা কম করেছিলাম তা ছাড়া বাকি রাস্তা অ্যাভারেজ স্পিড এই গাড়ি চালালাম,  যখন শিলিগুড়ি রোড এ পৌঁছে ডানদিকে ঘুরলাম তখন প্রায় দশটা বাজে। তখন হঠাৎ করে বাবাই বলে উঠলো " আমরা আজ শিলিগুড়িতে থাকবো না, কারণ শিলিগুড়িতে আমাদের আগেরবারের থাকার অভিজ্ঞতা খুব একটা আনন্দ কর হয়নি, কারণ হোটেলটা ছিল খুব নোংরা, আর বাকি যে হোটেল গুলো ছিল, তার কস্টিং ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে যদি অত টাকা দিয়েই থাকতে হয়, তাহলে পাহাড়ের উপরে গিয়ে থাকব।"
ভেবে দেখলাম ও কথাটা মন্দ বলেন নি তাই গাড়ি চালাতে চালাতে ই গন্তব্যের পরিবর্তন হয়ে গেল এবার আমরা যাব মিরিক। যদিও এর জন্য আমাদের আরও 76 কিলোমিটার বেশি বাইক চালাতে হবে। যেমনিভাবে অমনি কাজ গাড়ির কানটা মুলে ধরলাম কারণ আমাদের একটার ভিতর পৌঁছতে হবে শিলিগুড়ি তবেই ঔ বাকি রাস্তা যাওয়া সম্ভব হবে। এগিয়ে চলেছি শিলিগুড়ির দিকে দুপাসাড়ি আনারস আর চায়ের বাগান কে দৃষ্টিগোচর করতে করতে এগিয়ে চলেছি। এবারে আরেকটা নতুন জিনিস দেখলাম এক্সপ্রেসের মধ্যিখানের বেরিয়ারে সুন্দর হলুদ ফুলের মেলা বাবাই আর বসে থাকতে না পেরে বলেই ফেলল "চলনা ওই মধ্যিখানে কিছু ছবি তুলি?"

নেভিগেটর ম্যাডাম ইচ্ছা প্রকাশ করবে আর ড্রাইভার দাঁড়াবে না তা কি হয়! 
তাই ওর ইচ্ছা পূরণ করতে বেশ কিছু ছবি তুললাম আবার গাড়িতে চড়ে এগিয়ে চললাম গন্তব্যের দিকে। 
শিলিগুড়ি ক্রসিংয়ে পৌঁছে আমরা ভুলবশত সিটি বাইপাস এর দিকে এগোতে শুরু করেছিলাম। সুতরাং ওখানে দশ পনেরো মিনিট দেরি হয়ে গেল, আবার কিছুটা ফিরে এসে মেইনরোড এগোতে যাবো ঠিক তখনই দেখতে পেলাম একটি মোমোর দোকান পেটে ছুঁচো ডন মারছে- বেশ অনেকক্ষণ ধরে তাই দাঁড়িয়ে পড়লাম খাবার জন্য। দুই প্লেট মোমোর অর্ডার  দিয়েছি। তখনই এক দিদি আমাদের দিকে এগিয়ে এলো নেপালি অবশ্যই কিন্তু ওনার একটা পা একটু চোট আছে, একটু খুঁড়িয়ে হাঁটেন, উনার দিকে তাকিয়েই ম্যাডাম বলে উঠল, "ওগো চিনতে পারছ না, আমরা এইখানেই না আগের বারে মম খেয়েছিলাম। আশ্চর্য হয়ে আমি বাচ্চা মেয়েটার দিকে তাকালাম আমারও মনে পড়ে গেল, ঠিক তো এই বাচ্চা মেয়েটার সাথে আমি অনেকক্ষণ গল্প করেছি, একই জায়গায় পুনরাবৃত্তি। আগের বারের তুলনায় বাচ্চাটা একটু বড় হয়ে গেছে তাকে কাছে ডাকতেই ওর মা আমাদের গাড়ির দিকে তাকিয়ে চিনতে পারল এবং বলল "আরে পেহেলে বার তো আপলোক ঝালং বিন্দু গিয়েতে না?"  অগত্যা তার তার কথায় হ্যাঁ না মিলিয়ে আর থাকতে পারলাম না।
ভদ্রমহিলা আরো জিজ্ঞাসা করলেন "ইসবার ক্যা প্লান হে দাদা কাহা জায়েঙ্গে?"
আমার ম্যাডাম ওনার সাথে ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে বেশ অনেকক্ষণ গল্প করলো, আমি তখন পাশের দোকানে মীরক যাবার সঠিক রাস্তা জেনে নিচ্ছিলাম।
এখান থেকে বেশ কিছুটা যাবার পর আমরা রাস্তার মধ্যে খানে একটা ফাঁকা জায়গায় বেশ অনেকক্ষণ রেস্ট নিলাম গাড়িটাকে ঠান্ডা করলাম কারণ এরপরে পাহাড়ি রাস্তা তাও প্রায় চল্লিশ পঞ্চাশ কিলোমিটার সুতরাং গাড়িটা ঠান্ডা করা অত্যাবশ্যক।
যাত্রা শুরু করার বেশ কিছুক্ষণ পর একটি পোষ্টের সেটা পেরোনোর পর থেকেই শুরু হলো চড়াই রাস্তা। ছিল রোদ্রউজ্জল ঝলমলে দিন আকাশে মেঘের লেশমাত্র এগিয়ে চলেছি গন্তব্যের দিকে একটির পরিবর্তনকে চলেছি এখনো ঠিক ততোটাই এর মুখোমুখি আমাদের হতে হয়নি।

 যদিও যাবার রাস্তা অনেকেই বলল এই গাড়ি দিয়ে শেষ 30 কিলোমিটার ওঠা খুবই কষ্টকর হবে কারণ উচ্চতা প্রচন্ড বেশি। তাও মনিপুর নিয়ে এগিয়ে চলেছি গন্তব্যে আরো 10 কিলোমিটার যাবার পরে সরাই রাস্তা কিছুটা নমুনা সামনে এলো বেশ চড়াই গাড়িটাকে দিয়ে যেতে খুব অসুবিধে হচ্ছিল মাত্র 4 কিলোমিটার যাওয়ার পরই গাড়ির ইঞ্জিন প্রচন্ড গরম হয়ে গেল তাই আমরা একটু দাঁড়ালাম সামান্য টিফিন করলাম।
 যে দোকানে টিফিন করছিলাম উনাকে জিজ্ঞেস করতে উনি বললেন এর পরবর্তী রাস্তা আরও চড়াই। 
তবুও মনের জোর নিয়ে এগিয়ে চলেছি আর ২১ কিলোমিটার বাকি বেশ বুঝতে পারছি গাড়িটার উপর চাপটা লাগছে কারন ইঞ্জিন পাওয়ার জেনারেট করতে বেশ কিছুটা প্রবলেম তৈরি করছে। 
তখন আর ইলেভেন পয়েন্ট 5 কিলোমিটার গন্তব্য থেকে দূরে আছি বাধ্য হয়ে আমার নেভিগেটর কে বলতে হল কিছুটা রাস্তা হেঁটে যেতে কারণ গাড়িটা প্রচন্ড গরম হয়ে গিয়েছিল।
 তবে আশেপাশের পরিবেশের সৌন্দর্য এতটাই মনমুগ্ধকর যে সেই সামান্য কষ্টটুকু আনন্দের সাথে উপভোগ করছিলাম। এখানকার সৌন্দর্য ও আশপাশের পরিবেশ সূর্যালোকের সুজাসুজি পাহাড়ে চড়ার দৃশ্যগুলিতে ক্যামেরাবন্দি করতে করতে আমাদের মনে হলো না যে আমরা প্রায় 500 মিটারের হেঁটে চলে এসেছি।
 এবার পেলাম একটি ভিউ পয়েন্ট এইখানে গাড়িটাকে অভিশাপ দিলাম এবং নিজেরাও কিছুক্ষণ টিফিন করলাম এবং আশপাশের ছবি তুললাম। গাড়িটা এখান থেকে শুরু করার সময় সবাইকে প্রচণ্ড বৃষ্টি ছিল তাই একটু ডিসপ্লে একবার পড়েও গিয়েছিলাম। তবে এখানকার মানুষ খুবই সাহায্য করে তাদের মধ্যে বেশ কজন এসে আমাদেরকে উড়তে সাহায্য করল যদিও এর পরে আর আমাদের তেমন কোন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় নি এবার আমরা এসে পৌছালাম সেই জায়গায় যেখানে লেখা আছে "আই লাভ মিরিক"।
যদি ও সময়টা ছিল বিকাল তাই অত্যাধিক ছবি তোলার পেছনে সময় নষ্ট না করে আমরা মিলিকে পৌছাবার চেষ্টা করতে শুরু করলাম কারণ ওখানে গিয়ে আমাদের রুম দেখতে হবে সাধারণভাবেই যেমনটি প্রতিবার হয় আমাদের কোন রুম বুক করা নেই আর এটাতো হলো আমাদের হঠাৎ প্ল্যান করা একটি দ্রষ্টব্য মাত্র। অচিরেই ব্রিকস পৌঁছাতে আমাদের প্রায় বিকাল হয়ে গেলো রাস্তায় বেশ কিছু হোমস্টে খোঁজার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তাহাদের পার হেড পার্ ডে খরচ 2000 থেকে আড়াই হাজারের কাছাকাছি যে কারণে এক্সট্রা আর্থিক বোঝা আমাদের ঘাড়ে চেপে যেতে। মিরিক পৌঁছানোর ক্ষেত্রে একটি বিষয়ে সবাইকে জানিয়ে রাখি এইখানে হোমস্টে এবং হোটেলের ভাড়া প্রচন্ড বেশি আর হেঁটে পাঁচ হাজার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজারের রুম পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের চাই সস্তা এবং সুরক্ষিত সুদৃশ্য একটি বাসস্থান আশেপাশের কিছু মানুষকে জিজ্ঞাসা করতে তারা বলল একমাত্র মিরিক বাজারের গিয়ে ওখান থেকে মনেস্ট্রি যাওয়ার রাস্তায় যে রুমগুলি আছে সেগুলির ভাড়ায় সবথেকে কম। তবুও বেশ কিছু রুমে ধাঁধা জিজ্ঞাসা করতে করতে আমরা পৌছে গেলাম মিরিক বাজার। এখানে আপার মিরিকের রাস্তা ধরে এগোতে শুরু করলাম রাস্তাটি প্রচন্ড চোরাই বাইক ওঠার কোন প্রশ্নই নেই অগত্যা বাইক থেকে নেমে আবার নেভিগেট ম্যাডাম খুঁজতে শুরু করলেন ঘর পাকার ঘর কারণ তার মত দরা দরি করার ক্ষমতা আমার নেই আর করবার কোন চেষ্টাই করেনি। মহিলারা জন্ম থেকেই দরদস্তুর করার একটি অভাবনীয় শক্তি নিয়ে জন্ম নেয় এমন আমার একটি অন্ধ বিশ্বাস আছে সুষ্ঠু সহযোগী এমনই এক শক্তিশালী এবং গুণসম্পন্ন মহিলার সাথে আমি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পেরেছি একে আমার সৌভাগ্য বললেও চলে। যাক যেমনটি প্রতিবারই হয় দরদস্তুর করে একটি রুম ভাড়া নিলেন ম্যাডাম মাত্র হাজার টাকা একদিনের দুজনের থাকার খরচ মনেস্ট্রি যাবার রাস্তা প্রথমটি ঘোড়ার পরেই একটি সদ্য নির্মিত বাড়ি পেলাম সুসজ্জিত সুবন্দোবস্ত যুক্ত এবং একটি সম্মিলিত কার্পেট বিছানো সুদৃশ্য ঘর। ম্যাডামকে শুভেচ্ছার মালা পরাতে পরাতে আমরা প্রবেশ করলাম ঐ গৃহে। মালিক বললেন এটি নির্মিত হয়েছে আমরা ধীরে ধীরে এটাকে হোটেলে নিয়ে আসব তাই এখন আমরা শুধুমাত্র থাকার বন্দোবস্ত করেছে এবং যারা আমাদের কাছে থাকেন তাদের খাবার সুব্যবস্থা আমরা করেছি বাইরের লোককে জন্য এখনও সব রেডি করে উঠতে পারেনি। রাত্রের জন্য কিছু খাবারের কথা বলে আমরা ঘরে ঢুকলাম। এখানে সবাই সন্ধ্যা আটটার মধ্যেই খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ে অগত্যা আমাদেরও সেই পন্থা অবলম্বন করতে হলো। তবুও বাঙালি ভদ্রলোক তাই তার সাথে আশপাশের অনেক গল্প করতে করতে বেশ অনেকটা সময় কেটে গেল পর থেকেই জানতে পারলাম এখানে সামনে উপরের দিকে একটি মনস্ট্রি আছে যদি দেখার জন্য উপযুক্ত খুব ভোরে ওখানে যাওয়া যায় যদিও ওরা খুব বেশি বাইরের লোক এলাও করে না কোভিদ নিয়মাবলীর জন্য। ঠিক করলাম পরের দিন ভোর বেলায় আমরা পৌঁছে যাব ওখানে। ওখানে খেতে বসে দেখলাম গরম খিচুড়ি এবং সাধারণ আলুর তরকারি সাথে একটি ডিম ভাজা ও পাপড় ভাজা যদিও এর খরচ আলাদাভাবেই ওনারা নেবেন তবুও খাবারের দিক থেকে এত দূর পাহাড়ের উপরে এসে এতো সুস্বাদু খাবার সারাদিনের ক্লান্তি কে অচিরেই দূর করে দেয়।

১৪.১০.২০২১(দিনরাত্রি)
সকাল সকাল ওঠার পরই আমাদের বাড়ির মালিক যাকে আমরা এখন কাকু বলে সম্বোধন করছি তিনি আমাদেরকে দুপেয়ালা ধূমায়িত গরম চায়ের সহযোগে সম্বর্ধনা জানিয়ে আমাদের সকাল সকাল মনেস্ট্রি ঘোরার নির্ঘণ্ট ওটা মনে করিয়ে দিলেন।
তাই আমরা অতি ভরি বেরিয়ে পড়লাম মনে স্ত্রীর পথে এখান থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার পায়ে হাটা রাস্তা মনীষী পর্যন্ত।

অতীব সুন্দর একটি আধ্যাত্মিক পরিবেশ মনকে শীতল ও স্নিগ্ধ করে তোলে। এই মানুষগুলির জীবনযাত্রা এবং দৈনন্দিন জীবনে নির্ঘণ্ট ও খুব কঠিন মানুষকেও ভাবিয়ে তোলে। যাক অন্ধকার কাটিয়ে আমরা এখন সূর্য উদয় দেখে নিলাম।
এবার আমাদের ঘরে ফেরার পালা হোটেলে ফিরে বেশী সময় নষ্ট না করে জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলাম কারণ আজ আমাদের মেডিকেল ঘুরতে হবে সাথে সাথে পৌঁছতে হবে কালিম্পং আমাদের আজকের গন্তব্য।
সকালবেলার সুন্দর ব্রেকফাস্ট পরোটা আলুর দম ডিম ভাজা পাহাড়ি টমেটোর চাটনি আমি তো পেট ভরে প্রায় চার পাঁচটা পরোটা খেয়ে ফেললাম ভারী খাবার দীর্ঘক্ষন পেটে থাকবে এবার আমাদের যাত্রা শুরু আমাদের যাত্রা শুরু করতে করতে প্রায় নটা বেজে গেছে।
ব্যাগ পত্র গাড়িতে বাধা ছাদা করার পর আমাদের সবার প্রথম লক্ষ্য হলো মিরিক লেক এখান থেকে মাত্র আড়াই কিলোমিটার নিচের দিকে।
দুরের আই লাভ মিরিক লেখাটা দূরের জঙ্গলের ভিতর বুঝা গেল বেশ দৃশ্যমান। 


সূর্যের ঝলমলে আলো আর নীল আকাশের ছটায় লেকটি যেন এক ষোড়শী কন্যা রুপি সুসজ্জিত এবং অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী, দুচোখ ভরিয়ে দেয় তার সৌন্দর্যের ছটায়। এখান থেকে আমাদের পরবর্তী দ্রষ্টব্য মিরিক ভিউ পয়েন্ট।
এখান থেকে পাহাড়ি রাস্তাগুলো এঁকেবেঁকে চলে যাবার এবং অন্য একটি পাহাড় থেকে সেই রাষ্ট্রপতি দেখার অনুভূতি সেটা ছিল অপূর্ব।
এবারে আমরা চললাম শিলিগুড়ি কলিংপং এর রাস্তায় যদিও রাস্তার মধ্যে আমাদের বেশ কয়েকবার দাওয়াতে হয়েছিল কারণ নাম্বার সময়ে ডাম ব্রেক প্রচন্ড হিট হয়ে যায় এবং তখন বিগ কম ধরে এটা স্বভাবতই নামার সময় ব্রেক এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। 
সুতরাং গাড়ি ঠান্ডা করার সুবাদে আমরা কিছুটা আনন্দ করে নিয়েছিলাম রাস্তার মধ্যে।
প্রায় 45 কিলোমিটার পর আমার সমতল ভুমি এখনো মেনে চলেছি গ্যাংটক শিলিগুড়ি রোড এর দিকে এই রাস্তা ধরে 30 কিলোমিটার যাওয়ার পর আমরা ডান দিকে ঘুরে যাব সেটি হল কালিংপং রাস্তা আর সোজা রাস্তাটি চলে যাচ্ছে সিকিমের শৈলশহর গ্যাংটক।
তিস্তাকে ডান পাশে রেখে পাহাড়ের চড়াই-উৎরাই বাইক নিয়ে যেতে বেশ ভালই লাগে সাথে সাথে আসে কিছু সুন্দর পাখির দর্শন।
এই রাস্তাটি কি চড়াই-উৎরাই হলেও খুশি কারণ এর জন্য বাইরে যেতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি এবং আমরা না দাঁড়িয়ে এই পুরো রাস্তা অতিক্রম করেছি। যখনই আমরা রাস্তায় ঢুকলাম তখন বুঝতে পারলাম এখনে চড়াই প্রচন্ড বৃষ্টি তাই গাড়িটিকে বেশ কিছুক্ষণ রেস্ট দিয়ে নেওয়া আবশ্যক।
 পাশের একটি দোকানে টিফিন করতে করতে আমাদের ঘরে ঢুকিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিল প্রায় ঘন্টা দেড়েক।
এবার শুরু করলাম চড়াই এর রাস্তা আগেই বলে রাখি এখানে বেশ কিছু রাস্তায় লোক আছে যে লোকগুলো গাড়ির স্প্রিট ধরে রাখা আবশ্যক, একবার গাড়ির স্পিড কমে গেলে এই রাস্তা দিয়ে চড়াই খুব কঠিন হয়ে পড়ে।
এই লাস্ট 30 কিলোমিটার রাস্তা আমাদের প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা সময় লেগেছিল। প্রচন্ড চোরাই গাড়ির ইঞ্জিন খুব গরম হয়ে যাচ্ছিল তবে মাঝে মাঝে কিছু ঝর্ণা থেকে জল নিয়ে ইঞ্জিন ঠান্ডা করছি লাম যেটা ওই সময় খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। যাক আমাদের কালিংপং পৌঁছানো হলো সময়টা সন্ধ্যা 7:30।
কভিদ মহামারীর অত্যাচারের মানুষ বহুদিন গৃহবন্দি ছিল, তাই এইবার তারা দিশেহারা হয়ে ছুটে চলেছে পাহাড়ে এবং সমুদ্রের দিকে, তার যথেষ্ট উদাহরণ পেলাম কালিম্পং ভ্রমণ, কালিম্পং এই পরিমাণ জনো সমারোহ আগে দেখিনি বলে আমার ধারণা। অগত্যা হোটেল দেখলাম তবে এখানে আমরা থাকার প্ল্যান করেছি তিন দিন যেতে হবে লাভা লোলেগাঁও এবং রিশপ সুতরাং রুমটা যথেষ্ট খুঁজে নিতে হবে এটা আমরা জানতাম। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে মাসিমর হোটেল এখানে খাওয়া দাওয়া করলাম আরো নাকি জিজ্ঞাসা করলাম এখানে সস্তায় ভালো হোটেল কোথায় পাওয়া যাবে ভাগ্যক্রমে এই মহিলা কলকাতার এবং ব্যবহার খুবই ভালো উনি ব্যবস্থা করে দিলেন একটি হোটেলের হোটেল উইশেস দরদস্তুর করে 500 টাকার দৈনিক ভালো একটি রুম পেয়ে গেলাম।
হোটেলটি যথেষ্ট ভাল সুসজ্জিত বাথরুমে বাথটাব কমোট এবং ঘরটিও যথেষ্ট সুসজ্জিত। সবকিছু আছে এইখানেই থাকার বন্দোবস্ত করলাম এবং খাওয়ার ব্যবস্থা করলাম মাসীমার হোটেলে। আজকে অনেক রাত্রি সুতরাং মাসিমার হোটেলে সামান্য কিছু খাওয়া দাওয়ার বন্দোবস্ত করব ভাবছি কিন্তু ন'টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। সুতরাং কতদূর পায়ে হেঁটে যাওয়া এখন সম্ভব নয় তাই সামনের একটি হোটেলে ঢুকে পড়লাম খাওয়ার জন্য ছোট্ট সপ খাবার ব্যবস্থা আছে তবে পুরোপুরি পাহাড়ি খাবার কলকাতার মত ভাত ডাল তরকারি পাওয়া যায় না সুতরাং মাংস ভাতের অর্ডার করলাম কিছুক্ষণ পরে বুঝতে পারলাম হোটেলটি আসলে একটি ট্যাব যেটা ঠিক সেটাই ড্রিঙ্ক ট্যাব। কোনরকমে দুজনে তাড়াতাড়ি খাওয়া-দাওয়া সেরে ফিরে গেলাম হোটেলে আজকের মত নিদ্রামগ্ন হয়ে শরীর খুব ক্লান্ত।
পরের দিন সকালের আমাদের প্ল্যান সাইটসিন কালিংপং কারণ গাড়িদহ একটু রেস্ট দেওয়া দরকার আজকে আর লংড্রাইভ না করাটাই শ্রেয় বলে মনে করলাম।
১৫.১০.২১
আজকের খুব সকাল সকাল উঠে নি ঘুম থেকে উঠতে সকাল সাড়ে সাতটা আটটা বেজে গেল। উঠে বুঝলাম আজকে কতটা ঠান্ডা নেই সুতরাং একটু ভালোভাবে স্নানটান সেরে চলে গেলাম মাসিমার হোটেল প্রাতরাশ টা ওখানেই সারব। উনার কাছে  জানতে চাইলাম খাবার কি আছে? উনি খুব সহজেই জানিয়ে দিলেন "পরোটা থেকে পাউরুটি বা লুচি যাই অর্ডার করবেন সেটি কিছু সময়ের মধ্যে তৈরি করে আপনাদেরকে দিতে পারব।" লুচির কথা শুনে জিভে জল আসা স্বাভাবিক কারণ একেতো বাঙালি তার উপরে আবার লুচি আলুর তরকারি বেগুন ভাজা ভাবাই যায় না, হেমেন্দ্র চন্দ্র রায় চৌধুরীর অসাধারণ ক্যারেক্টার মানিক বাবুর নুচি বেগুন ভাজার কথা মনে পড়ে গেল।
অগত্যা মানিকবাবুর সেই জঙ্গলের প্রত্যাশা আমি পাহাড়ে পূরণ করলাম আর বেরিয়ে পড়লাম সাইটসিইং কালিম্পং।
১. মর্গান হাউস
২. দূরপিন দ্বারা ভিউ পয়েন্ট
৩. ক্যাকটাস নার্সারি
৪.লেপচা মিউজিয়াম
(কোভিদ নিয়ম বৃদ্ধির জন্য এটি বন্ধ ছিল)
৫. ডেলো ভিউ পয়েন্ট
৬.দুরপিন মনেস্ট্রি
(কোভিদ নিয়ম বৃদ্ধির জন্য এটি বন্ধ ছিল)
৭. মঙ্গল ধাম
মঙ্গল ধাম যাত্রা বিচারের জন্য স্থগিত রাখলাম কারণ ওটা সম্পূর্ণ অন্য একটি রাস্তা। বাকিগুলো আমাদের সকাল বেলার মধ্যে কমপ্লিট করার চেষ্টা। ১৪ কিলোমিটার বাইক চালিয়ে পৌঁছে গেলাম মর্গান হাউস। এটি একটি হন্টেড হাউস রূপে প্রচলিত থাকলেও গিয়ে দেখলাম এটি এখন হোটেলে রূপান্তরিত হয়েছে বেশকিছু মানুষ ভৌতিক অভিজ্ঞতা নেবার জন্য এখানে রাত কাটান। 
ঠিক এর সামনে  ডেলো ভিউ পয়েন্ট এটি ডিফেন্স জোন তাই ভিতরে যেতে গেলে পারমিশন নিতে হয় তবুও এর আশেপাশে ছবি তোলার জন্য একটি অনবদ্য স্থান এবং সত্যিই দৃষ্টিনন্দন।

এখানে বেশ কিছুক্ষন টাইম কাটানো এবং টিফিন করে নেবার জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা এই ভিউ পয়েন্টে লাগোয়া একটি ভালো ক্যান্টিন ও আছে। 
এরপরে আমরা এগিয়ে চললাম দূরবীন দ্বারা ভিউ পয়েন্ট এটি এখান থেকে আরও সাত কিলোমিটার পাহাড়ি রাস্তা। এখান থেকে সামনের বেশকিছু পাহাড় কে খুব সুন্দর ভাবে দেখা যায় এবং ছবি তোলার জন্য আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকে এই জায়গাটি অনবদ্য একটি জায়গায়।
এই জায়গাটি খুবই সুন্দর এবং সামনে বিস্তারিত ফাঁকা জায়গা এবং পাহাড়ের একটি অভূতপূর্ব ঢেউয়ের মেলা মনকে শান্ত করে দেয়। এই ভয়ে পয়েন্টে আমরা প্রায় কুড়ি মিনিট মতো বসে ছিলাম। এরপরে আমাদের গন্তব্য স্থল হলো ক্যাকটাস পার্ক।
এখান থেকে ফেরার পথে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার পর বেশ কিছুটা নিচের দিকে নেবে আমরা পৌঁছালাম ক্যাকটাস।
এখানে এন্ট্রি ফি ৪০ টাকা কিন্তু ভেতরে ঢোকার পরে এর ধরন আর বিভিন্ন ক্যাকটাসের সংগ্রহ এবং তার প্রতিপালনের পদ্ধতি এবং সুব্যবস্থা ৪০ টাকা এন্ট্রি ফী কে তুচ্ছ করে দেয়। 
এখানেই আমরা জানতে পারলাম যে দূরবীন ধারা মনেস্ট্রি এবং লেপচা মিউজিয়াম কভিদ নিয়মাবলীর আওতায় আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে অগত্যা এখান থেকে আমাদের হোটেলে ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোন রাস্তা রইল না। তবুও পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমাদের বেশ কিছুটা দেরি হয়ে গিয়েছিল প্রায় দুপুর বারোটা সুতরাং আমাদের পরিচিত মাসিমার হোটেলে মধ্যাহ্নভোজন টি খুব ছিমছাম ভাবে শেষ করে পৌঁছে গেলাম হোটেলে। মঙ্গল ধাম যাব বিকালবেলা কারণ ওই সময়ে ওইখানে প্রার্থনা হয় যেটি‌ নাকি অসাধারণ। বিকাল বেলায় তখন সাড়ে তিনটে বাজে আমরা পদব্রজে এগিয়ে চললাম মঙ্গল দাম কারণ বাহন টাকেও একটু নিস্তার দিতে চাইছিলাম।
প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার নিচের দিকে হাঁটতে হাঁটতে আমরা পৌঁছালাম মঙ্গল ধাম
এখান থেকে ফিরতে ফিরতে আমাদের প্রায় সাড়ে সাতটা বেজে গিয়েছিলো।  পরের দিনের যাত্রাপথ লাভা লোলেগাঁও যদিও সন্ধ্যার খবর খুব একটা ভালো খবর দিল না। ভয়ংকর নিম্নচাপের প্রভাব হতে চলেছে উত্তরবঙ্গের যার প্রভাব থেকে নিস্তার পাবে না কালিংপং ও। সুতরাং বিষয়টা আমাদের কাছে হয়ে উঠল একটি খুবই ভয়ের ব্যাপার কারণ আগেই বলেছি বৃষ্টির মধ্যে বাইক চালানো তাও আবার পাহাড়ে সত্যিই খুবই বিপদজনক। রাত্রের ভজন শেষ করার সময় যখন মাসি মাকে জিজ্ঞাসা করলাম উনি বললেন লাভা গেলেও লোলেগাঁও যাওয়ার চেষ্টা না করাই ভালো কারণ ওই দিকের রাস্তা ফেরার সময় খুব অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারে। 
১৬ .১০.২০২১
কাল রাত্রের খবরে আরো একটি দুঃসংবাদ সেটি হল উত্তরবঙ্গে ঘনিয়ে আসছে নিম্নচাপের প্রকোপ প্রায় এক সপ্তাহ নিম্নচাপের প্রভাব থাকবে উত্তরবঙ্গে। সুতরাং আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করার প্রয়োজনীয়তা আরো কিছু টা বেড়ে গেল। তবুও সকাল সাতটায় মাসীমার হোটেলে নিজেদের প্রাতরাশ সম্পূর্ণ করে বেরিয়ে পড়লাম লাভার অভিমুখে। পাহাড়ের উপরে ছোট্ট একটি শহর সাথে আছে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের আনন্দ এবং একটি জলপ্রপাত যা সৌন্দর্যকে আরো কিছুটা ত্বরান্বিত করে। সাড়ে আটটা নাগাদ আমরা যাত্রা শুরু করলাম সাথে সিদ্ধ ডিম আটটা দশটা, লবণ আর মরিচ গুঁড়ো আছে। সাথে আরো আছে এক ফ্লাক্স ধূমায়িত চা। পূর্ব দিকে বেশ কিছুটা এগুনোর পরে আমাদের রাস্তা পরিবর্তন করে চড়াই রাস্তায় ধরতে হলো। এই রাস্তাটি আমাদেরকে লাভা এর রাস্তায় পৌঁছে দেবে। 

এটি কোন হাইরোড নয় একটি সাইড রোড বলা যেতে পারে সিঙ্গেল রোড। তবে পাহাড়ের কিনারা হয়ে এগিয়ে চলার আনন্দই আলাদা। এইভাবে চলতে চলতে আমরা দুটি ভিউ পয়েন্ট দেখতে পেলাম সেখান বেশ কিছুক্ষণ চায়ের আনন্দ উপভোগ করলাম। রাস্তার মধ্যে 1 পর্ব ডিম সিদ্ধ পাউরুটি ও খাওয়া হয়ে গেছে। আমরা চলে এসেছি 14 কিলোমিটার রাস্তা তবে চড়াই কিছুটা বেশি থাকায় বারবার দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছিলাম। শেষ যে ভিউ পয়েন্ট এ দাঁড়ালাম এখানে বেশ কিছু ইয়ং ছেলে মেয়ে মিলে একটা টিফিন কর্নার খুলেছে। দুটি ছেলে এদের মধ্যে ছিল যারা খুবই দুরন্ত। এদের একজন কে এই জায়গাটি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে আমাদের বিস্তারিত বর্ণনা করে জানালো। 
এই ভিউ পয়েন্ট গুলি এক একটি স্মৃতিসৌধ পরিবারের বয়স জ্যেষ্ঠ দের স্মরণে এইগুলি বানানো হয়েছে এবং নতুন প্রজন্মের বংশধররা এই জায়গাগুলিতে ছোট ছোট দোকান বা রেস্টুরেন্টে খুলে অর্থ উপার্জন করছে এবং পরিবারকে সাহায্য করেছে। 
তারা ইউ জানালো যে এখান থেকে কিছুটা দূরে একটি রিসোর্ট আছে এবং তার সামনে আছে ওয়াটার প্রজেক্ট যেটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হিল এরিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটি দ্বারা নির্মিত। এবং এটি হলো কালিম্পংয়ের পানযোগ্য জলের সরবরাহ কেন্দ্র এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং তার মন্ত্রিসভার কেউ এলে এইখানেই থাকে এর আশেপাশের পরিবেশটা খুব সুন্দর এবং নিরিবিলি বলা যেতে পারে মনমুগ্ধকর শেয়ার ও জানালো যে এখানে সব ধরনের খাদ্য ও পানীয়ের ব্যবস্থা করা আছে মন্ত্রী ব্যক্তিদের জন্য।

1 পর্ব ছবি সংগ্রহ করে এগিয়ে চললাম নিজেদের গন্তব্যে এখান থেকে কিছুটা যাবার পরই পৌঁছলাম হাইরোডে সেখান থেকে 26 কিলোমিটার লাভা ভিউ পয়েন্ট। আকাশ খুব মেঘলা বৃষ্টি প্রায় হবো হবো। এর মধ্যেই দুজনে আলোচনা করে নিলাম যে আজকে আমাদের শেষ দিন এরপর নিচে নামতে শুরু করব। কারণ বৃষ্টিতে পাহাড়ি অঞ্চলের অবস্থা বলা বাহুল্য।

Comments